হিমালয়ের পাদদেশে মহানন্দা, ডাহুক, করতোয়া বিধৌত স্বাধীনতার তীর্থভূমি তেঁতুলিয়া। পাক হানাদার বাহিনীর সর্বগ্রাসী ছোবলমুক্ত পঞ্চগড় জেলার ঐতিহ্যবাহী উপজেলা তেঁতুলিয়া। সতেজ কচি চা পাতার সবুজে বর্ণিল বাংলাদেশের সর্বোত্তরের শান্তিরর এক জনপদ তেঁতুলিয়া।
সম্প্রতি গড়ে উঠা এশিয়ান হাইওয়ের প্রসস্ত পাকা রাস্তা। সীমান্তের কাঁটা তারের বেড়ায় ঢাকা পড়েছে সবুজ। ওপার থেকে একটি খাল নির্দ্বিধায় ঢুকে পড়েছে আমাদের বাংলাদেশের সীমানার ভিতরে। খালটির দুই পাশের শষ্য রাশি মায়া ছড়াচ্ছে অপার হয়ে। এ যেন ভাল লাগার, ভালবাসার এক অন্য স্বর্গ রাজ্য। যা আপনার ভ্রমণ পিপাসিত মনেকে খানিকটা হলেও নাড়া দিবে।
পঞ্চগড় ছা্ড়া এরকম দৃশ্য দেশের আর কোথায় আছে জানি না। চা বাগানের কথা উঠলেই মনে হয় সিলেট বা শ্রীমঙ্গলের কথা। কিন্তু সমতল ভূমিতে চা বাগান এ রকম গল্প শুনেছেন কখনো। সমতল ভূমি পঞ্চগড়েও গড়ে উঠেছে অর্গানিক চায়ের প্রাণ জুড়ানো সবুজ বাগান। কতজন তার খবর রাখে! সমতলের চা বাগান দেখতে অনেকেই পঞ্চগড়ে আসেন।
আসাদ গেইট হতে রাতে হানিফ/শ্যামলী/খালেক/নাবিল/কেয়া কামিত্ম পরিবহণের গাড়ীতে চড়ে সকাল ৮.০০টার মধ্যে পৌছানো যায় দেশের শেষ প্রামেত্মর জেলা পঞ্চগড় শহরে।
চা বাগান দেখা আর মহানন্দা তীরের ডাকবাংলোয় রাত কাটানোর পরিকল্পনার আনন্দই সে রকমই।। পঞ্চগড় থেকে তেতুলিয়ার দূরত্ব প্রায় ৩৭ কিঃ মিঃ। পঞ্চগড়ের অধিকাংশ চা বাগান এই তেঁতুলিয়াতেই। এ দেশে চা বাগান শুরু হয়েছিল ১৮৪০ সালে। সিলেটে নয়, চট্টগ্রামের ক্লাব প্রাঙ্গণে। সিলেটে উৎপা্দন শুরু হয়ে ১৮৫৪ সালে আর পঞ্চগড়ে ২০০৩ সালে। প্রায় ১৫০ বছর পর। তেঁতুলিয়ায় আগত প্রত্যেক ভ্রমণ পিপাসু ব্যক্তি চা গাছ ও চা বাগান দেখতে খুবই আগ্রহ প্রকাশ করেন । মুলত পর্যটকদের এ চাহিদা মেটানোর জন্য উপজেলা কৃষি বিভাগের সহায়তায় পিকনিক কর্নার এর ভিতর ২০০৩ সালে একটি প্রদর্শনী চা বাগান তৈরী করেন । এখানে এক বিঘা জমিতে ১৫০০টি বিটি-২ জাতের চা গাছ রোপন করা হয়েছে ।
এ বাগান দেখে চা ও চা বাগান সমন্ধে মোটামুটি ধারনা পাওয়া যেতে পারে । বর্তমানে তেতুলিয়া উপজেলায় গড়ে উঠেছে- কাজী এন্ড কাজী টি এস্টেট, টিটিসিএল, আগা ইন্ডাস্ট্রিজ এন্ড কমার্স, ডাহুক টি এস্টেট, ময়নাগুড়ি টি এস্টেট, হক টি এস্টেট, নাহিদ টি এস্টেট, কুসুম টি এস্টেট, গ্রীণ টি এস্টেট, পঞ্চগড় টি এস্টেট, গ্রীন কেয়ার, গেটকো টি এস্টেট। এছাড়াও স্থানীয়ভাবে ক্ষুদ্র প্রান্তিক চাষিদের উদ্যোগে প্রায় ৫০/৬০টি চা বাগান গড়ে উঠেছে। আর এসব চা বাগানে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে প্রায় ১৫০০/২০০০ বেকার শ্রমিকের । বর্তমানে পঞ্চগড়ে প্রায় দুই শতাধিক বাগানে ২২৫৫.৫৪একর জমিতে চা চাষ হচ্ছে। ২০০৯ সালে পঞ্চগড় থেকে চা উৎপাদিত হয়েছে ৬,৫৬,০২৪ কেজি ।
রাস্তার দুই পাশে বিস্তীর্ণ সবুজ। মুর্হুতেই হারিয়ে যায়। বাগানোর ভিতরে ঢুকলে দেখা পাওয়া যায়২০-২৫ জন নারী কাঁধে সাদা ব্যাগ ঝুরিয়ে অবিরাম চা পাতা তুলছেন। যা নয়নাভিরাম দৃশ্য! বাগানের মধ্যে ছায়া তরু বা শেড ট্রি হিসেবে লাগানো হয়েছে অনেক ঔষধিগাছ। তেতুলিয়ার চা বাগান কিন্তু সিলেট বা চট্টগ্রামের মতো উচুঁ-নীচু নয়, একবারেই সমতল, দেখতেও অন্য রকম। অর্গনিক ও দার্জিলিং জাতের চায়ের চাষ হয় একমাত্র তেঁতুলিয়ার বাগানগুলোতে। ইতোমধ্যে এ চা দেশের বাইরেও সুনাম অর্জন করেছে।
শুভেচ্ছান্তে-
সোহাগ চন্দ্র সাহা
উপজেলা নির্বাহী অফিসার
তেঁতুলিয়া, পঞ্চগড়।
ছবি
সংযুক্তি
সংযুক্তি (একাধিক)